ভালো নেই সব শিল্পী
২৩ জুলাই ২০২০, ১০:১০
আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০, ১০:১০
আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০, ১০:১০
ঈদের নাটকের শুটিংয়ে সাফা কবির ও তাহসান
জুন মাসে শুরু হয়েছে স্বল্প পরিসরে
নাটক, টেলিছবি ও বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং। আগের তিন মাস করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ রোধে বন্ধ ছিল সব ধরনের প্রযোজনার কাজ। বেকার ছিলেন শিল্পী,
নির্মাতা, কুশলীরা। এখন অনেকে কাজে ফিরলেও কমেছে প্রযোজনার সংখ্যা। বড়
তারকাদের অনেকেই ঈদ সামনে রেখে নিয়মিত কাজ করছেন, কিন্তু অনেক শিল্পীর
অবস্থা করুণ। এই সময়ে টিভি নাটকের শিল্পীদের অবস্থা নিয়ে এবারের আয়োজন।
শেষবারের মতো শুটিং সেটে গিয়েছেন ১৮ মার্চ। এরপর থেকে ঘরবন্দী
অভিনেত্রী দিলারা জামান। কারণ, করোনাভাইরাস। এর মধ্যে পয়লা বৈশাখ গেল,
ঈদুল ফিতর গেল, সামনে আসছে ঈদুল আজহা। কিন্তু কোনো নাটকের শুটিংয়েই আপাতত
যোগ দিচ্ছেন না। তিন–চার মাসে ফিরিয়ে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি নাটক-টেলিছবির
কাজ।
জুন মাস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে নাটক, টেলিছবি,
বিজ্ঞপনচিত্রের শুটিং। তাই দিলারা জামানের কাছে এসেছিল ঈদের ৬টি নাটকে
অভিনয়ের প্রস্তাব, তাঁর অভিনীত দুটি চলমান ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরুর
কথাও ছিল। কিন্তু শারীরিক কারণে প্রতিটিই ফিরিয়ে দিয়েছেন। খণ্ড নাটকে দুই
দিন শুটিংয়ের জন্য দিলারা জামানের সম্মানী ৩০ হাজার টাকা, দিনপ্রতি ১৫
হাজার টাকা। শুধু খণ্ড নাটকের হিসাব করলে এই অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানেই এই
অভিনেত্রী প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দিলারা জামান বললেন,
‘আমি তো অনেকটাই সচ্ছল, অবস্থাসম্পন্ন। তাই কাজ ফিরিয়ে দিতে গেলে ভাবতে হয়
না। এই সময়ে শারীরিক সুস্থতা সবচেয়ে জরুরি। আমার চিন্তা হয় তাঁদের নিয়ে,
যাঁরা তেমন অবস্থাসম্পন্ন নন। অভিনয়টাই যাঁদের একমাত্র আয়ের অবলম্বন।’
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ২২ মার্চ থেকে নাটকের শুটিং বন্ধ
করে দেওয়া হয়। তখন থেকেই লকডাউনে শিল্পী ও কুশলীরা। দেশের নাট্যাঙ্গনের
প্রথম সারির তারকা শিল্পীদের সবাই এই সময়ে নিজ বাড়িতে নিরাপদে দিন কাটাতে
শুরু করেন। কিন্তু নাট্যজগতের চরিত্রাভিনেতারা পড়েন ভীষণ সংকটে। টিভি
অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে তাদের
তালিকাভুক্ত সদস্যসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০। অর্থাৎ, মার্চ থেকে মে মাস
পর্যন্ত শুটিং বন্ধ থাকার কারণে এই শিল্পীরা মূলত বেকার ছিলেন।
অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অভিনেতা সুজাত
শিমুল জানান, বড় তারকা ও অবস্থাসম্পন্ন শিল্পী ছাড়া করোনাকালে অনেক শিল্পীই
ভীষণ সংকটের মুখে পড়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে
বেকার হয়ে পড়া অনেক শিল্পীকেই সাহায্য করছেন। সুজাত শিমুল বলেন, ‘প্রতি
মাসে আমরা প্রায় ২০০ শিল্পীকে ৩ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দিয়েছি, সঙ্গে
কিছু খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছি। যাঁরা সংকটের মধ্যে ছিলেন, তাঁরা আমাদের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেই ভিত্তিতেই এই সহায়তা করা হয়েছে।’
গত জুন মাস থেকে স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে শুটিং। জুলাই থেকে
পুরোদমে কাজ শুরু করেছে অনেক নির্মাতা ও টিভি চ্যানেল। তাই আপাতত আর
অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শুটিং শুরু হলেও অনেক শিল্পী, বিশেষ করে
চরিত্রাভিনেতাদের দুঃসময় কাটেনি; বরং সময়টা আরও কঠিন হচ্ছে।
করোনাকালের এই ‘নতুন স্বাভাবিক’ সময়ে কমে আসছে টেলিভিশন
প্রযোজনা নির্মাণের পরিসর। নির্মাতা রেদওয়ান রনির সঙ্গে কথা হয়
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং করা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে
অবশ্যই শুটিং সেটে কম লোকবল রাখতে হবে। সময়ের প্রয়োজনেই চিত্রনাট্য এমন করে
ভাবতে হবে, যাতে সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো মানা যায়। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট
চরিত্র ছেঁটে ফেলতে হতে পারে।’
আরও কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কথা হলো। প্রত্যেকেই বললেন
করোনা–পরবর্তী সময় হবে টিভি প্রযোজনার জন্য চ্যালেঞ্জিং। এর কারণ হিসেবে
তাঁরা মনে করছেন: ১. নাটক তৈরির বাজেট সংকুচিত হবে। কমাতে হবে নির্মাণের
ব্যয়। ২. বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি প্রকল্পভিত্তিক
প্রযোজনাগুলো হয়ে যাবে গুটিকয় চরিত্রনির্ভর। তাই দেখা দিতে পারে
বৈচিত্র্যের সংকট। ৩. স্বল্প বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে যদি দেশের
তারকাশিল্পীরা নিজেদের সম্মানী সমন্বয় না করেন, তবে ছেঁটে ফেলতে হতে পারে
অনেক চরিত্র। বাজেট সমন্বয়ের জন্য কমে যেতে পারে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা
শিল্পী ও কুশলীদের সম্মানী।
তবে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো উতরে যাওয়ার সম্ভাব্য পথ বাতলে দিলেন
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। তিনি বলেন, ‘গুটিকয়
তারকাশিল্পীর ওপর নির্ভর করার যে চর্চা তৈরি হয়েছে, তা বদলানোর সময় এসে
গেছে। নির্মাতা, প্রযোজকেরা নতুন সম্ভাবনাময় শিল্পী নিয়ে কাজ করলে যেমন
বাজেট সমন্বয় করা যাবে, তেমনই নতুন প্রতিভাও সুযোগ পাবে। আর তা ছাড়া আমাদের
কাজগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বিষয়নির্ভর (কনটেন্ট)। এই ধারা বজায় থাকলে
আমরা বৈচিত্র্যের সংকটে পড়ব না বলে বিশ্বাস করি।’
পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর কেটেছে পুরোনো টিভি প্রযোজনার মধ্য
দিয়ে, যেগুলোর কাজ হয়েছিল করোনাকালের আগে। কিন্তু ঈদুল আজহার জন্য
নাট্যনির্মাতা, শিল্পী, কুশলীদের মাঠে নামতেই হচ্ছে। তাই শুটিং সেটগুলো
অপেক্ষায় আছে তারকা শিল্পীদের।
অভিনেতা অপূর্ব জানালেন, নির্মাতারা জুনের শুরু থেকেই নতুন
নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত
না হয়ে কাজ শুরু করতে চাননি না তিনি। কারণ, পরিবারে বয়স্ক মা-বাবা আছেন,
আছে শিশুসন্তান। অবশেষে জুলাইয়ে এসে শুটিংয়ে যোগ দেন। কিন্তু দুই দিন কাজ
করার পরে আর সেটি এগোয়নি। কারণ, শুটিং ইউনিটের দুই সদস্যের দেহে করোনা ধরা
পড়ে। থেমে যায় অপূর্ব ও মেহ্জাবীনের ঈদের নাটকের শুটিং। ১৪ দিনের জন্য
কোয়ারেন্টিনে চলে যান এই দুই অভিনয়শিল্পী। ২২ জুলাই এই দুই শিল্পীর
কোয়ারেন্টিন শেষ হলে আবারও কাজে যোগ দেন তাঁরা। জানা গেছে ৩০ জুলাই পর্যন্ত
ঈদের কাজ করবেন। তবে এই কাজ মোটেও গত বছরের মাইলফলক ছুঁতে পারবে না।
অভিনেতা আফরান নিশো সব ধরনের শুটিং থেকে দূরে আছেন। প্রতি ঈদে
এই শিল্পীর যে ১৫–২০টির মতো নতুন নাটক দেখা যেত, এবারের ঈদুল আজহায় তেমনটা
হচ্ছে না বললেই চলে। পর্দায় তাঁদের যে নতুন কাজগুলো আসতে যাচ্ছে,
করোনাকালের আগেই সেগুলোর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, একক নাটকের জন্য
অপূর্ব, আফরান নিশোর সম্মানী দিনপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সাধারণত একটি
একক নাটকের জন্য দু-তিন দিনের শিডিউল দিয়ে থাকেন তারকাশিল্পীরা। তাই প্রতি
ঈদে তাঁরা যদি গড়ে ১০টি নাটকেও অভিনয় করেন, তাহলে ২০ দিনের শুটিংয়ে তাঁদের
আনুমানিক আয় দাঁড়ায় আট লাখ টাকা, যেখানে এ বছরের ঈদে এই আয়ের খাতা প্রায়
শূন্য।
তাঁদের ভাষায়, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার সামনে অর্থ কিংবা
খ্যাতি বিষয় মাথাতেই আসে না। পরিচালক ও প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
বর্তমান সময়ে চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীদের মধ্যে একক নাটকের জন্য দিনপ্রতি
জাহিদ হাসান ও তাহসানের সম্মানী প্রায় ৫০ হাজার টাকা, মোশাররফ করিমের প্রায়
৪০-৫০ হাজার টাকা, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও মেহ্জাবীনের প্রায় ৩০ হাজার টাকা
করে, মমর ২৫ হাজার টাকা, তানজিন তিশার ২০-২৫ হাজার টাকা। সম্মানীর দিক থেকে
তাই বড় তারকাদের লোকসানটাও বড়।
তবে করোনাকালেও অনেকে বাড়িতে বসে বিভিন্ন ধরনের ওভিসি (অনলাইন
ভিডিও কমার্শিয়াল) আর পণ্যের প্রচারণা করে আয়ের চাকা সচল রেখেছেন। অনেকেই
আবার লম্বা অবসর সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন আত্মোন্নয়নে, সৃজনশীল কাজে অথবা নিছক
বিশ্রামের মধ্য দিয়ে। কারণ, অনেক তারকাই করোনাকালের আগে মাসে টানা ২০ থেকে
২৫ দিন শুটিং করতেন। ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের আগে কাজের এই মাত্রা মাসের
পুরো ৩০ দিনে গিয়েই ঠেকত। তাহলে ভাবা যায়, গত ৩ মাসের প্রায় ৯০ দিনে কত
লোকসান হলো একেকজনের?
অবশ্য এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবসর নিয়ে চিন্তিত নন তারকাশিল্পীরা।
তিন মাসে অনেক কাজ হাতছাড়া হলো বলে আক্ষেপও নেই। তাঁদের চিন্তা মানবিক
বিপর্যয় নিয়ে। মেহ্জাবীন বললেন, ‘মহামারি যেভাবে পুরো বিশ্বকে বিপর্যস্ত
করে দিচ্ছে, সেখানে আমি আমার একার কাজ, আয়, সম্মানী নিয়ে বিচলিত নই। বরং
আমি মনে করি, এ ধরনের হিসাব–নিকাশ নিয়ে কথা বলার মতো সময় এটা নয়। সময়টা
মানবিকভাবে চিন্তা করার, যতটুকু সুযোগ আর সামর্থ্য হয়, ততটুকু দিয়ে সংকটে
থাকা মানুষের সাহায্য করার।’
‘আবার কবে আগের মতো কাজ পাব’
কথা
হয় লিটন খন্দকার নামের একজন অভিনেতার সঙ্গে। বিভিন্ন টিভি নাটকে তিনি
স্বল্প ব্যাপ্তির চরিত্রে কাজ করেন। সাধারণত এ ধরনের চরিত্রের জন্য তিনি
দিনপ্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা সম্মানী পেয়ে থাকেন। এটাই তাঁর একমাত্র
জীবিকা। লিটন জানালেন, ২০ বছর ধরে তিনি টেলিভিশন নাটকে কাজ করছেন, এমন
অনটনে আগে কখনো পড়েননি। ২২ মার্চ থেকে কোনো কাজ নেই। তিন মাস ধরে বেকার।
জুন মাসে স্বল্প পরিসরে শুটিং শুরু হলেও মাত্র ২ দিন কাজ পেয়েছেন, এটা
দিয়েই চলতে হবে, যত দিন পর্যন্ত অন্য কোনো কাজের ডাক না আসে। লিটন খন্দকার বলেন, ‘কী যে করব, ভাবতেও পারছি না। অভিনয় ছাড়া অন্য কোনো কাজও পারি না। করোনার আগে মাসে ১৫ দিন শুটিং থাকত। এখন নিরাপত্তার জন্য সবাই কম মানুষ নিয়ে শুটিং করছে, তাই আবার কবে আগের মতো কাজ পাব, জানি না। ২০ বছর পর এসে নতুন কোনো কাজ শেখার, অন্য পেশায় চলে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছি।’ লিটন নতুন কাজ তো পাচ্ছেনই না, যেসব নাটক অর্ধেক কাজ করার পর লকডাউন শুরু হয়ে যায়, সেগুলোর সম্মানীও আটকে আছে।
লিটন খন্দকারের মতো এমন শিল্পীর সংখ্যা কম নয়। টিভি
অভিনয়শিল্পীদের একটা অংশ টেলিভিশন আর মঞ্চনাটকের ওপর নির্ভরশীল।
করোনাভাইরাসের কারণে এখন আর ভাবা যায় না নাটক দেখতে আসা মানুষে গমগম করা
মিলনায়তনের কথা। করোনার কারণে যেখানে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী উইলিয়াম
শেক্সপিয়ার’স গ্লোব থিয়েটারের দ্বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেউলিয়া হওয়ার পথে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্কাস প্রতিষ্ঠান সির্ক দ্যু সোলেইল, যুক্তরাষ্ট্রের
ব্রডওয়েগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, সেখানে
আমাদের মঞ্চ–নাট্যাঙ্গনের সংকট অভাবনীয় কোনো ব্যাপার নয়। বরং এই সংকট দিন
দিন আরও প্রকট হচ্ছে। শিল্পীরা পড়ছেন লাগামহীন অভাব-অনটনে।
কমে যাচ্ছে প্রযোজনা
টিভি নাটকে শিল্পীরা কাজ করেন দুই পদ্ধতিতে। কেউ আছেন শুধু
উৎসবভিত্তিক একক নাটক ও স্বল্প ব্যাপ্তির ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। কেউ আবার
বছরজুড়ে প্রচারিত হয় এমন ধারাবাহিক, দীর্ঘ ধারাবাহিক, টেলিছবি ও একক নাটকে
কাজ করেন। অনেকে আবার দুইভাবেই কাজ করে বছরজুড়ে ব্যস্ত সময় কাটান। তেমনই
একজন অভিনেতা মীর সাব্বির। প্রায় তিন মাস লকডাউনে থাকার পর ৪ জুন থেকে
নিয়মিত শুটিং শুরু করেছেন তিনি। কয়েক বছর ধরে ঈদকে কেন্দ্র করে ২-৩ মাসের
ব্যবধানে ধারাবাহিক ও একক মিলিয়ে ২৫-৩০টি নাটকে কাজ করতেন। কিন্তু করোনার
বিস্তার বেড়ে গেলে ঈদুল ফিতরে কোনো নাটকে অভিনয় করেননি। এবার ঈদুল আজহাকে
সামনে রেখে পুরোদমে কাজ করছেন, শুটিং করছেন প্রতিদিন।
২০১৯ সালে ঈদুল আজহায় ২৫-৩০টি নাটকে কাজ করেছিলেন মীর
সাব্বির। অনেক ইচ্ছা থাকলেও এবার সেই মাইলফলক ছুঁতে পারবেন না বলে জানালেন।
মীর সাব্বির বললেন, ‘কিছুটা পিছিয়ে থাকতেই হবে। কারণ আমি নিয়মিত অভিনয়
করলেও, অনেকে এখনো আতঙ্কিত। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে
কাজে যোগ দিচ্ছেন না অনেকে। তাই এবার কাজ কম হবে। ২০-২২টির বেশি হয়তো করতে
পারব না।’
বছরজুড়ে
ধারাবাহিক ও একক নাটকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকা অভিনেতা আ খ ম হাসানেরও একই
অবস্থা। গত বছর প্রায় ৮টি ঈদ ধারাবাহিক, আর ২০-২৫টি ঈদ নাটকে অভিনয়
করেছিলেন। এ বছর কাজ শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে ৩–৪টি ঈদ ধারাবাহিক আর ১০–১২টি
একক নাটকে এবার অভিনয় করা হতে পারে তাঁর। আ খ ম হাসানকে নিয়ে নিয়মিত কাজ
করেন এমন নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধারাবাহিক ও একক
নাটক–নির্বিশেষে এই অভিনেতার দিনপ্রতি সম্মানী ৩০ হাজার টাকা। বড় লোকের বেটি নামের একটি ঈদের নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ২৭ জুন থেকে কাজ শুরু করেন মোশাররফ করিম। কিন্তু দুই সপ্তাহ কাজ করার পরই ‘যমজ’সহ ৭টি নাটকের শুটিং বাতিল করেছেন তিনি। সাধারণত প্রতি ঈদের দেড় মাস আগে থেকে উৎসবভিত্তিক কাজ করেন মোশাররফ। কিন্তু এবার করোনার কারণে সেই গতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানালেন তিনি। মোশাররফ জানান, ‘করোনার কারণে আমি কাজ করে স্বস্তি পাচ্ছি না। শুটিংয়ে মন দিতে পারছি না। কাজ করার যে মানসিক প্রশান্তি, সেটা এখন বিন্দুমাত্র নেই।’ গত বছর ঈদের আগের দুই মাসে যেখানে ধারাবাহিক-একক নাটক মিলিয়ে ২৫-৩০টি প্রযোজনায় কাজ করেছিলেন। এবার ঈদুল আজহায় তাঁর অভিনীত গিরগিটি, ব্যঞ্জনবর্ণ, ওগো বধূ সুন্দরীসহ প্রায় ১১টি একক ও ধারাবাহিক নাটক প্রস্তুত করেছেন নির্মাতারা।
টেলিভিশন প্রযোজনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর
ঈদুল আজহায় যেখানে ১৭টি টিভি চ্যানেলে প্রায় ৫০০ নতুন প্রযোজনা (ঈদের আগের
দুই মাসে শুটিং হওয়া) প্রচারিত হয়েছিল, এ বছর একই উপলক্ষে নতুন প্রযোজনার
সংখ্যা এক–তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই